ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ছয়টার তাসরিফ-১ লঞ্চে চড়ে রওনা হলাম হাতিয়ার তমরুদ্দি ঘাটের উদ্দেশ্যে।ফাগুনের আগমনী হাওয়া ও শান্ত নদীর মাঝে ধীরে ধীরে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলছিল আমাদের লঞ্চ।আর চাঁদ তার রূপে প্রকৃতিকে করেছিল অপরূপ।এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে রাতের অর্ধেক কেটে গেল। চলতে চলতে সকাল ৭টার দিকে লঞ্চ মনপুরা ঘাটে পৌঁছে যায় এবং প্রায় ৩০মিনিটের মত থামে।সেই সুযোগে মনপুরা নেমে হাঁটাহাঁটি ও সকালের নাস্তা সেরে নিলাম।৩০ মিনিট পর লঞ্চ আবারো ছুটে চলে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে। অবশেষে সকাল নয়টার দিকে আমরা হাতিয়ার তমরুদ্দি ঘাটে পৌঁছে যাই।যদিও সেদিন ফাগুনের প্রথম দিন ছিল তবু তমরুদ্দি ঘাটে নামতেই প্রকৃতি কুয়াশার চাদরে আমাদের অভ্যর্থনা জানায়। সেখান থেকে সিএনজিতে রওনা হই মোক্তারিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে ,তারপর ট্রলারে নিঝুৃমদ্বীপ।সেখান থেকে অটোরিক্সায় নামার বাজার চলে আসি।তমরুদ্দি থেকে নিঝুম দ্বীপের পথে পথে খেজুর রসের মিষ্টি গন্ধ ও প্রাকৃতিক দৃশ্য আপনার পথের সকল কষ্ট ভুলিয়ে দিবে । নামার বাজারে দুপুরের খাবার ও জুমার সালাতের পর আমরা একটি ট্রলার ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ি চৌধুরী খাল,কবিরাজের চর, ম্যানগ্রোভ বন ও হরিণ দেখার উদ্দেশ্যে।কিন্তু বহু অনুসন্ধানেও হরিণের দেখা মিললো না।আসলে এটা ভাগ্যের ব্যাপার।হরিণের দেখা না মিললেও দেখা মিললো মহিষের পালের।ট্রলারে চড়ে চৌধুরী খালের দু’পাশে ম্যানগ্রোভ বন,শাঁসমূল ও পাখিদের উড়াউড়ি দেখতে দেখতে চলে গেলাম নামার বাজার সি-বিচে।নামার বাজার সি-বিচেই রয়েছে নান্দনিক খেজুরগাছগুলো যা নিঝুম দ্বীপের পরিচয় বহন করে। সি-বিচে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখার পর সন্ধ্যায় ফিরে আসি নামার বাজারে।সন্ধ্যায় নামার বাজার জমজমাট থাকে।স্হানীয়রা জিনিসপত্র বাজারে নিয়ে আসেন।খেজুরের মিঠাই, কাঁচা খেজুরের রস ও মহিষের দই সুলভ মূল্য কিনতে পাওয়া যায়। নামার বাজারের খেজুর রসের গরম গরম জিলাপি অনেকের নিকট পছন্দনীয়। বাজার ঘুরে দেখার মাধ্যমে প্রথম দিনের সমাপ্তি।
পরের দিন খুব ভোরে বেরিয়ে পড়ি ওয়াচ-টাওয়ার ও নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানে।ওয়াচটাওয়ার থেকে দ্বীপের সৌন্দর্য আবলোকনের পর উদ্যানের নাম না জানা বৃক্ষের মাঝে কিছুক্ষণের জন্য নিজেদের হারিয়ে ফেলি। তারপর আবার সি-বিচে যাই।সকাল বেলা বিচে কোন সাড়াশব্দ সেখানে নেই।মাঝে মাঝে অদ্ভুত কিছু পোকামাকড়ের শব্দ শোনা গেল।ঘন কুয়াশা আর পুরোটাই নিস্তব্ধ,নিঝুম।তখন বুঝলাম নিঝুম দ্বীপ নামের সার্থকতা। তারপর সাইকেলে দ্বীপের এদিক-সেদিক ঘুরা ফেরা শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই।অতঃপর রাত ৪টার দিকে ঢাকায় পৌঁছে যাই।
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ শেষে বলতে চাই,নিঝুম দ্বীপে এখনো পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম। তাই কেউ প্রকৃতির খুব কাছে যেতে চাইলে নিঝুম দ্বীপ তার জন্য। এখানে মানুষের কোলাহল নেই তবে আছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের ভান্ডার।
কি কি দেখতে পারবেন
১) নামার বাজার সী বিচ,
২) কুমারিকা সী বিচ,
৩) চৌধুরী খাল ( সুন্দরবন সাদৃশ্য),
৪) কমলার দীঘি,
৫) কবিরের চরের ছোট বন ভূমি.
৬) ডুবাইর খাল লেক.
৭) জাতীয় উদ্যান, ওয়াচ টাওয়ার.
৮) ছেওয়াখালী রিজার্ভ ফরেস্ট এরিয়া।
যাতায়ত ও খরচ:
ঢাকা-তমরুদ্দি লঞ্চ ভাড়া = সিঙ্গেল কেবিন: ১০০০ | ডাবল কেবিন : ১৮০০ | ডেক: ৩০০
(সদরঘাট থেকে হাতিয়ার লঞ্চ ছাড়ে বিকাল :৫টা ও ৬টায়, হাতিয়া থেকে সদরঘাটের লঞ্চ ছাড়ে দুপুর ১২টা ও দুপুর ১টায়)
তমরুদ্দি থেকে মোক্তারিয়া ঘাট:
সিএনজি রিজার্ভ :৮০০ /মোটরসাইকেল:৩০০(দুইজন বসা যায়) (এই রাস্তাটি খুবই খারাপ,তাই মোটরসাইকেলে যাতায়াতে কষ্ট কম হবে)
মোক্তারিয়া ঘাট-নিঝুমদ্বীপ :
ট্রলার:২৫(জনপ্রতি) /স্পিড বোট:৬০(জনপ্রতি)
নিঝুমদ্বীপ ঘাট – নামারবাজার :
অটোরিকশা রিজার্ভ :১২০ /মোটরসাইকেল :১০০ (দুইজন)
দ্বীপে ঘুরার জন্য ট্রলার ভাড়া :৬০ (জনপ্রতি) ট্রলারের সাইজ ও যাত্রী অনুপাতে ভাড়া কম-বেশি হয়।
রুম ভাড়া : ৮০০টাকা।
তাবুতে থাকলে ২জন ৫০০টাকা।
নিঝুম দ্বীপে নিঝুম রিসোর্ট,শাহিন হোটেলসহ আরো অনেক হোটেল রয়েছে। কেউ কম খরচে থাকতে চাইলে মসজিদ বোর্ডিংয়ে থাকতে পারেন। সেখানে রুম ভাড়া তুলনামূলক কমই।
সাইকেল ভাড়া: ৪০ টাকা (১ ঘন্টা)
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়: শীতকাল
ঘুরতে গিয়ে পরিবেশের কোন ক্ষতি করবেন না, স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন, বন্যপ্রাণীর মাংস খাবেন না।
আমার লেখায় আমার নোয়াখালী – লেখা ও ছবিঃ আব্দুস সবুর রাকিব, এমডি সবুজ ও তুষার দে
আপনি যদি চান একজন বা একাধিকজন মিলে সারাদিন এই এলাকায় ঘুরবেন, দেখবেন, খাবেন তবে আরো বিস্তারিত জানতে ও সাহায্যের জন্য বা একজন গাইড বা পুরো ট্যুর ম্যানেজ করার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ইমেইল করুনঃ [email protected] আমরা সর্বাত্বক সাহায্য করবো।